অনাদায়ী পাওনা বা কুঋণ কি এবং হিসাববিজ্ঞানে এর ব্যবহার
অনাদায়ী পাওনা হল কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যদি কোন দেনাদার এর টাকা আদায় করা সম্ভব না হয়, সেই টাকাটা অনাদায়ী পাওনা হিসাবে ধরতে হয়। অনাদায়ী পাওনার কে আবার কুঋণ ও বলা হয়।
অর্থাৎ, সহজ ভাবে, কোন দেনাদার যদি টাকা না দিয়ে দেওলিয়া বা আর পাওয়া যাবে না এই রকম হয় তাহলে ঐ টাকাটা অনাদায়ী পাওনা বা কুঋণ হিসাবে অন্তর্ভুক্ত হবে।
অনাদায়ী পাওনা বা কুঋণ এর হিসাব সমীকরণ
হিসাব বিজ্ঞানে প্রথম ও মৌলিক কাজ হল হিসাব সমীকরণ। হিসাব সমীকরণ অনাদায়ী পাওনা বা কুঋণ এ কিরুপ প্রভাব পড়বে তা নিচে দেওয়া হল
অনাদায়ী পাওনা বা কুঋণ হল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের একটি স্বাভাবিক বা পরিচালন খরচ। তাই হিসাব কালের শেষে যদি কোন দেনাদারের টাকা আদায় করতে না পারার সম্ভাবনা থাকলে, তখন সেই হিসাব কালের পরিচালন খরচ হিসাবে ধরতে হবে।
তাহলে হিসাব সমীকরণের যে উপাদানের উপর প্রভাব পরবে তা হল
- খরচ (কুঋণ হওয়ার পলে ব্যবসায়ে খরচ হয়েছে, তাই হিসাব বিজ্ঞানের নিয়ম অনুসারে খরচ যদি হয়ে যায় সেটা খরচ হ্রাস পাবে, তাই এখানে খরচ হ্রাস পেয়েছে)
- সম্পদ (যেহেতু অনাদায়ী পাওনার টাকাটা আগে দেনাদার ছিল(অর্থাৎ সম্পদ ছিল) এখন আর সম্পদ থাকবে না, তাই সম্পদ হ্রাস পাবে) )
লেনদেনের বিবরণ | ডেবিট /ক্রেডিট | উপাদানের প্রভাব | মন্তব্য |
---|---|---|---|
অনাদায়ী পাওনা ধরা হল | অনাদায়ী পাওনা ---- ডেবিট
দেনাদার /অনাদায়ী পাওনা সঞ্চিতি ---ক্রেডিট |
OE(ব্যয় হ্রাস)
A (সম্পদ হ্রাস) |
অনাদায়ী পাওনা বা কুঋণ এর জাবেদা
আগেই বলা হয়েছে অনাদায়ী পাওনা বা কুঋণ হল একটি খরচ। তাই সেই হিসাবে অনাদায়ী পাওনার জাবেদা দিতে হবে।
অনাদায়ী পাওনার জাবেদা সাধারণত ২ ভাবে দেওয়া যায়।
- সনাতন পদ্ধতি
- আধুনিক পদ্ধতি
নিচে উভয় পদ্ধতির জাবেদা আলাদ আলাদা জাবেদার ঘরে দেওয়া হল
সনাতন পদ্ধতিতে অনদায়ী পাওনা বা কুঋণ এর জাবেদা
তাং | বিবরণ | খ.পৃ | ডেবিট টাকা | ক্রেডিট টাকা |
---|---|---|---|---|
--- | অনাদায়ী পাওনা ----- ডেবিট
দেনাদার হিসাব ----- ক্রেডিট |
৫০০০ |
৫০০০ |
আধুনিক পদ্ধতিতে অনদায়ী পাওনা বা কুঋণ এর জাবেদা
তাং | বিবরণ | খ.পৃ | ডেবিট টাকা | ক্রেডিট টাকা |
---|---|---|---|---|
--- | অনাদায়ী পাওনা ----- ডেবিট
অনাদায়ী পাওনা সঞ্চিতি ----- ক্রেডিট |
৫০০০ |
৫০০০ |
অনাদায়ী পাওনা সঞ্চিতি কি
আমরা অনাদায়ী পাওনার জাবেদা করার সময় সনাতন আর আধুনিক পদ্ধতি দেখেছি। এখন এই দুই পদ্ধতি পার্থক্য যদি একটু লক্ষ্য করি তাহলে দেখা যাবে পার্থক্য শুধু সনাতন পদ্ধতিতে দেনাদার ক্রেডিট ধরেছে আর আধুনিক পদ্ধতিতে অনাদায়ী পাওনা সঞ্চিতি ধরেছে।
আয় বিবরণীতে অনাদায়ী পাওনার ব্যবহার
হিসাব বিজ্ঞানের চুড়ান্ত হিসাব হল আর্থিক অবস্থার বিবরণী। এখানে এসে অনাদায়ী পাওনা একটু ঝামেলা লাগতে পারে। আমি খুব সহজ ভাবে আপনাদের বোঝার চেষ্ঠা করব।
আপনাকে সর্বপ্রথম একটি বিষয় মাতায় রাখতে হবে আয় বিবরণী হল একটি খরচ। সাধারণত আয় বিবরণী হয় রেওয়ামিল থেকে। এখন রেওয়ামিলে যদি কোন সঞ্চিতি থেকে থাকে তাহলে সেটি পুরাতন সঞ্চিতি।
এখন আপনাকে আয় বিবরণীতে এসে অনাদায়ী পাওনা বা কুঋণকে পরিচালন খরচে লিখে, সেখান থেকে পুরাতন সঞ্চিতি (যেটা রেওয়ামিলে থাকে) বাদ দিতে হবে(যদি থাকে) এরপর সমন্বয়ে যদি কোন সঞ্চিতি থাকে তখন সেটি নতুন সঞ্চিতি যেটা অনাদায়ী হতে পুরাতন টা বাদ দেওয়ার পর সেটার সাথে যোগ হবে।
বিষয়টি উদাহারণের সাহায্যে বোঝানো হল
ধরুন আপনাকে রেওয়ামিলে দেওয়া আছে অনাদায়ী পাওনা ২০,০০০ টাকা
ও অনাদায়ী পাওনা সঞ্চিতি ১০,০০০ টাকা।
এবং সমন্বয়ে দেওয়া আছে নতুন অনাদায়ী পাওনা সঞ্চিতি ১৫০০০ টাকা।
এখন আপনার আয় বিবরণী তে অনাদায়ী পাওনা হবে
আয় বিবরণী | |||
---|---|---|---|
বিবরন | টাকা | টাকা | টাকা |
অনাদায়ী পাওনা | ২০,০০০ | ||
(-)পুরাতন অনাদায়ী পাওনা সঞ্চিতি | (১০,০০০)
১০,০০০ |
||
(+) নতুন অনাদায়ী পাওনা সঞ্চিতি | ১৫,০০০ |
২৫,০০০ |
আর্থিক বিবরণীতে মোট অনাদায়ী পাওনা হিসাবে ২৫০০০ টাকা যাবে।