সমন্বয় দাখিলা বা সমন্বয় জাবেদা কি এবং কিভাবে করবেন? NagorikSebaBD

একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের আয়ূষ্কালকে কতিপয় ক্ষুদ্র ও সমান সময়খণ্ডে ভাগ করে নেওয়া হয়। এ ক্ষুদ্র সময়খণ্ডকে হিসাবকাল বলে। একটি হিসাবকালের সঠিক নিট লাভ বা ক্ষতি নির্ণয় করতে হলে এবং হিসাবকাল শেষে সঠিক আর্থিক অবস্থার বিবরণী প্রস্তুত করতে হলে চলতি হিসাবকালের আয়ের সাথে শুধু চলতি হিসাবকালের খরচের মিলকরণ করতে হবে।

অর্থাৎ শুধু চলতি হিসাবকালের আয় থেকে চলতি হিসাবকালের খরচ বাদ দিতে হবে। আয় বা খরচের মধ্যে যদি বিগত বা আগামী হিসাবকালের কোনো আয় বা ব্যয় থাকে তা সংশ্লিষ্ট আয় বা খরচের থেকে বাদ দিতে হবে।

অন্যদিকে চলতি হিসাবকালের যদি কোনো আয় বা খরচ বকেয়া থাকে তা সংশ্লিষ্ট আয় বা খরচের সাথে যোগ করতে হবে। অর্থাৎ একটি হিসাবকালের সঠিক আয় বা খরচ নির্ণয় করার জন্য অগ্রিম ও বকেয় আয় বা খরচগুলো সমন্বয় করার জন্য যে জাবেদা দাখিলা দেওয়া হয় তাকে সমন্বয় দাখিলা বলে।

সাধারণত হিসাবকাল শেষে রেওয়ামিলের পর ও আর্থিক বিবরণী প্রস্তুতের পূর্বে সমন্বয় জাবেদা প্রদান করা হয়। সাধারণত হিসাবকাল নীতি ও মিলকরণ নীতি সমন্বয় জাবেদাকে প্রভাবিত করে থাকে।

সমন্বয় দাখিলা কি তার একটি সহজ উদাহারণ

বিষয়টি একটি উদাহারণ এর মাধ্যমে জানা যাক, ধরুন, বাবুল ট্রেডার্স এ ৩১ শে ডিসেম্বর ২০২২ সালের হিসাবকালের সব লেনদেন এন্ট্রি করে রেওয়ামিল সম্পন্ন করল।
এখন, সে দেখল, তার প্রতিষ্ঠানের ভাড়া ২০২৩ এর ৩ মাসের অগ্রিম ভাড়াসহ ১৫ মাসের ভাড়া ৩০,০০০ টাকা প্রদান করল। কিন্তু সে ৩ মাসের ভাড়া চলতি সম্পদে হওয়ার কথা ছিল কিন্তু সেটি ভুল করে সব গুলো টাকা (৩০,০০০) টাকা খরচ হিসাবে দেখানো হল।
সেটি ঠিক করার জন্য আপনাকে সমন্বয় দাখিলা করতে হবে।

তাই সমন্বয় লেনদেনগুলো হয় হিসাবকালের শেষের দিন।

সমন্বয় জাবেদার প্রকারভেদ (Classification of Adjusting Entry )

সমন্বয়কে নিম্নোক্ত শ্রেণিতে বিভক্ত করা যায়:

সমন্বয়
অগ্রিম সমূহ বকেয়া সমূহ
অগ্রিম আয় অগ্রিম ব্যয় বকেয়া আয় বকেয়া ব্যয়

অগ্রিম আয় বা অনুপার্জিত রাজস্ব এর সমন্বয় জাবেদা

চলতি হিসাবকালে অর্থ পাওয়া গেছে কিন্তু এর সুবিধা আগামী হিসাবকাল বা কালসমূহে প্রদান করা হবে এমন প্রাপ্তিকে অগ্রিম রাজস্ব বলে। যেমন- অগ্রিম শিক্ষানবিশ সেলামি, অগ্রিম সেবা রাজস্ব, অগ্রিম ভাড়া প্রাপ্তি প্রভৃতি।

উদাহারণঃ রেওয়ামিলে অগ্রিম আয় উল্লেখ আছে ১৫,০০০ টাকা।
সমন্বয় বলা হয়েছে অগ্রিম আয়ের ১০,০০০ টাকা আয় হয়েছে।
অর্থাৎ ১৫,০০০ টাকা অগ্রিম গ্রহণ করেছিল সেখান থেকে ১০,০০০ টাকার পন্য বা সেবা প্রাদান করে দিয়েছেন।

এখন এর সমন্বয় জাবেদা হবে,

বিবরণ ডেবিট টাকা ক্রেডিট টাকা
অনুপার্জিত আয় ----- ডেবিট
আয় ---- ক্রেডিট
১০,০০০
১০,০০০

অগ্রিম ব্যয় বা অগ্রিম খরচের সমন্বয় জাবেদা

অর্থ প্রদান করা হয়েছে কিন্তু এখন পর্যন্ত সেবা নেওয়া হয়নি এমন খরচকে অগ্রিম খরচ বলে। অথবা চলতি হিসাবকালে অর্থ প্রদান করা হয়েছে কিন্তু এর সুবিধা আগামী হিসাবকাল বা কালসমূহে পাওয়া যাবে এমন অর্থ প্রদানকে অগ্রিম খরচ বলে। যেমন: অগ্রিম বেতন, অগ্রিম ভাড়া, অগ্রিম বিমা সেলামি প্রভৃতি।

রেওয়ামিলে ভাড়া অন্তর্ভুক্ত আছে ৩০,০০০ টাকা।


সমন্বয়ে বলা হল ভাড়া ১৫ মাসের প্রদান করা হয়েছে। (৩ মাসের অগ্রিম)
এর সমন্বয় জাবেদা দাখিলা হবে
বিবরণ ডেবিট টাকা ক্রেডিট টাকা
অগ্রিম ব্যয় ----- ডেবিট
ভাড়া হিসাব ---- ক্রেডিট
৬,০০০
৬,০০০

নোটঃ ৩০,০০০ ÷ ১৫ × ৩ = ৬,০০০

বকেয়া আয়ের সমন্বয় জাবেদা

সেবা বা পণ্য ক্রেতাকে হস্তান্তর করা হয়েছে কিন্তু প্রতিদান হিসাবে অর্থ বা অন্য কোনো সম্পদ পাওয়া না গেলে তাকে বকেয়া রাজস্ব বলে। যেমন- ধারে বিক্রয় ও বিনিয়োগের সুদ

উদাহরণঃ পন্য বিক্রয় বাবধ ২০০০ টাকা এখনো পাওনা রয়েছে।
এর সমন্বয় জাবেদা হবে

বিবরণ ডেবিট টাকা ক্রেডিট টাকা
বকেয়া/প্রাপ্য আয় ----- ডেবিট
বিক্রয় হিসাব ---- ক্রেডিট
২,০০০
২,০০০

বকেয়া ব্যয়ের সমন্বয় জাবেদা

সেবা গ্রহণ বা পণ্য ক্রয় করা হয়েছে কিন্তু চলতি হিসাবকালে প্রতিদান দেওয়া হয়নি এমন সেবা গ্রহণকে বকেয়া ব্যয় বলে। যেমন- বকেয়া বেতন, বকেয়া ভাড়া, ধারে পণ্য ক্রয়, বকেয়া মজুরি প্রভৃতি ।

উদাহারণঃ কর্মচারীর বেতন ১২,০০০ টাকা এখনো প্রদান করা হয় নি।
এর সমন্বয় জাবেদা হবে

বিবরণ ডেবিট টাকা ক্রেডিট টাকা
বেতন হিসাব ----- ডেবিট
বকেয়া বেতন ---- ক্রেডিট
১২,০০০
১২,০০০
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url