দুতরফা দাখিলা পদ্ধতি কি ও এর বৈশিষ্ট্য, ব্যাখ্যাও ধারণা - NagorikSebaBD
ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক বিবরণী বিশুদ্ধ ভাবে নির্ণয়ের উদ্দেশ্যে হিসাববিজ্ঞানে প্রতিটি লেনদেনের যে দ্বৈত স্বত্বা (অর্থাৎ প্রতিটি লেনদেনে কে ২টি পক্ষের একটি ডেবিট ও অপরটি ক্রেডিট) নীতি অনুসরণ করে লেনদেন লিপিবদ্ধ করা হয়, তাকেই দুতরফা দাখিলা পদ্ধতি বলে।
সহজ ভাবে বলতে গেলে, হিসাববিজ্ঞানের প্রতিটি লেনদেনকে দুটি পক্ষে বিভক্ত করে একটি পক্ষকে ডেবিট ও আরেকটি পক্ষকে ক্রেডিট হিসাবে ধরে হিসাবের বইতে লিপিবদ্ধ করাকে দুতরফা দাখিলা পদ্ধতি বলে।
দুতরফা দাখিলা পদ্ধতির উৎপত্তি
ইতালীর প্রসিদ্ধ গণিতবিদ লুকা প্যাসিওলি (Luca Pacioli) ১৪৯৪ খ্রিষ্টাব্দে আর্থিক ঘটনাবলি সঠিক ও সুচারুভাবে লিপিবদ্ধ করার একটি পদ্ধতি বর্ণনা করেন। উক্ত পদ্ধতিটি দুতরফা দাখিলা পদ্ধতি নামে পরিচিত।
দু'তরফা দাখিলা পদ্ধতির ধারণা ও ব্যাখ্যা
ব্যবসায়ে যখন কোন লেনদেন গঠিত হয়। ঐ লেনদেনের সাথে সাথে ব্যবসায়ে কোন না কেন সুবিধা পাওয়া যায়। আবার ঐ সুবিধা পাওয়ার জন্য অন্য কোন কিছু ত্যাগ করে দিতে হয়।
যেমনঃ ধরুন আপনি ব্যবসায়ের একটি সম্পদ বিক্রয় করলেন, এখন এই সম্পদ বিক্রয় এর ফলে আপনার নগদ টাকা আসলো। অর্থাৎ সেটা আপনার সুবিধা। এখন আপনি খেয়াল করলেন ঐ টাকা টুকু পেতে আপনার কাছ থেকে কিছু ত্যাগ বা ছেড়ে দিতে হল তা হল সম্পদ।
এই যে উপরের উদাহারন একটি সুবিধা পাওয়ার জন্য আরেকটি উপাদন ত্যাগ করতে হচ্ছে। এই পদ্ধতিটিই হল মুলত দুতরফা দাখিলা পদ্ধতি।
দুতরফা দাখিলা পদ্ধতি আবিষ্কার হওয়ার পূর্বে সুবিধা গ্রহন ও ত্যাগ এভাবে হিসাব করা হত না। এই পদ্ধতি আসার সাথে সাথে বড় বড় প্রতিষ্ঠান আর্থিক বিবরণী নির্ভুল ভাবে করা সম্ভব হয়, যা দুতরফা দাখিলা পদ্ধতি আবিষ্কারের আগে নির্ভুল ভাবে করা সম্ভব হত না ও বড় বড় কোম্পানির লাভ লোকসান বের করা অনেক জটিলতা ছিল।
দু'তরফা দাখিলা পদ্ধতি বিজ্ঞানসম্মত ও আধুনিক পদ্ধতি
দুতরফা দাখিলা পদ্ধতির মাধ্যমে নির্ভুল ও অনেক কম সময়ে যোথ মূলধনী কোম্পানির আর্থিক বিবরণী সমধান করতে পারায়, এটিকে আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি বলা হয়।
দুতরফা দাখিলা হিসাবপদ্ধতির মূলনীতি বা বৈশিষ্ট্য
হিসাববিজ্ঞানের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য, বিজ্ঞানসম্মত, পূর্ণাঙ্গ ও স্বয়ংসম্পূর্ণ হিসাব সংরক্ষণ পদ্ধতিই হচ্ছে দুতরফা দাখিলা পদ্ধতি। দুতরফা দাখিলা পদ্ধতিতে অর্থ বা আর্থিক মূল্যে পরিমাপযোগ্য প্রতিটি লেনদেনকে দ্বৈত স্বত্বায় প্রকাশ করা হয় ফলে একটি হিসাব খাতকে প্রাপ্ত সুবিধার জন্য ডেবিট এবং অপর হিসাব খাতকে প্রদত্ত সুবিধার জন্য ক্রেডিট করা হয়।
দুতরফা দাখিলার বৈশিষ্ট্য গুলো হল
১। দ্বৈত সত্তা :
প্রতিটি লেনদেনে কমপক্ষে দুটি হিসাব থাকে। ডেবিট ও ক্রেডিট নির্ণয় করার পূর্বে প্রতিটি লেনদেনে জড়িত হিসাবখাতসমূহ বের করে তাদের প্রত্যেকটি কোন শ্রেণির হিসাব তা নিরূপণ করতে হয়। তারপর দুতরফা দাখিলা অনুযায়ী প্রতিটি হিসাবের ডেবিট ও ক্রেডিট নির্ণয় করতে হয়
২। দাতা ও গ্রহীতা :
প্রতিটি লেনদেনে সুবিধা গ্রহণকারী গ্রহীতা ও সুবিধা প্রদানকারী দাতা হিসেবে কাজ করে।
৩। ডেবিট ও ক্রেডিট করা
সুবিধা গ্রহণকারী হিসাবকে ডেবিট ও সুবিধা প্রদানকারী হিসাবকে ক্রেডিট করা হয়।
৪। সমান অঙ্কের আদান-প্রদান।
প্রতিটি লেনদেনের ডেবিট ও ক্রেডিট টাকার পরিমাণ সমান হবে।
৫। সামগ্রিক ফলাফল।
যেহেতু প্রতিটি লেনদেন ডেবিট-ক্রেডিট বিশ্লেষণ করে সমপরিমাণ টাকার অঙ্ক দ্বারা লিপিবদ্ধ করা হয়, সেহেতু সামগ্রিক ফলাফল নির্ণয় সহজ হয়। মোট লেনদেনের ডেবিট দিকের যোগফল ক্রেডিট দিকের যোগফলের সমান হয়।